admaya

পৃষ্ঠাসমূহ

Sunday, September 26, 2010

লিনাক্স :: একটি শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেম

            
প্রাক কথনঃ

বিশ্বজুড়ে লিনাক্স নামের শক্তিশালী এবং বিশ্বস্ত এই অপারেটিং সিস্টেমটিকে যেভাবে সবাই গ্রহণ করে নিয়েছে তা সত্যিই বিস্ময়কর। এখন ইন্টারনেট থেকে শুরু করে বড় বড় কোম্পানীর নেটওয়ার্ক সার্ভার সবই ইউনিক্স ও লিনাক্স সিস্টেমের উপরে এতোটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে উইন্ডোজ ছাড়া পৃথিবী চললেও লিনাক্স কিংবা ইউনিক্স ছাড়া পৃথিবী অচল!

অসম্ভব রিলায়াবিলিটি, স্ট্যাবিলিটি ও শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেম বলতে যা বুঝায় তার সবই আছে লিনাক্সের মাঝে, তাই এর এতো কদর। সবাই যাতে আগ্রহী হয় কিংবা অহেতুক ভয় কাটিয়ে সহজেই যেন চমৎকার এই অপারেটিং সিস্টেমটিকে ব্যবহার করতে পারে তর জন্যই এই লেখা।
 



লিনাক্সের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ

লিনাক্স হচ্ছে সোর্সকোড উন্মুক্ত সম্পূর্ণ ফ্রি একটি অপারেটং সিস্টেম। যারা কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র অথবা পাইরেসিকে নীতিগতভাবে ঘৃণা করেন তারা জানেন যে একটি সোর্সকোড উন্মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম কতটা আশীর্বাদ স্বরুপ! সোর্সকোড উন্মুক্ত, ফ্রি…এসব কথা শুনে যদি কেউ ভেবে থাকেন এটি সস্তাদরের সাধারণ অপারেটিং সিস্টেম, তাহলে বলব বোকার স্বর্গে বাস করছেন। সারা বিশ্ব লিনাক্স কে যেভাবে গ্রহণ করছে তা সত্যি চমকপ্রদ! এটা শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে এর প্রবল শক্তিমত্তা আর নির্ভরযোগ্যতার কারণে। লিনাক্স তৈরী করেন লিনাস টোরভাল্ডস ১৯৯১ সালে আই ৩৮৬ প্রসেসর এর জন্য। লিনাক্স কে ইউনিক্স (The UNIX System, UNIX System) এর ক্লোন বলা হলেও বর্তমান লিনাক্সের সাথে এর আকাশ-পাতাল ফারাক। যে ইউনিক্স থেকে লিনাক্সের জন্ম সেই ইউনিক্সের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭১ সালে। রিচার্ড স্টলম্যান নামের এক মহামানব ১৯৮৫ সালের দিকে এন্টি কপিরাইট আন্দোলন শুরু করেন তার জিএনইউ এর মাধ্যমে এবং এর ফলেই আজকে ওপেনসোর্স এতো জনপ্রিয় বা লিনাক্সের ফ্রি ডিস্ট্রিবিউশন সম্ভব হচ্ছে। তো লিনাস টোরভাল্ডস ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে লিনাক্সের প্রথম ভার্সন ০.০১ ইন্টারনেটে রিলিজ করেন। উৎসাহীরা ভিড় জমায়, কোডগুলো ডাউনলোড করে, টেস্ট করে পরিবর্ধন করে লিনাস টোরভাল্ডসের কাছে পাঠাতে থাকে। কাজ এগিয়ে চলে, লিনাক্সের ঘাঁটিতে আসতে থাকে হাজার হাজার ফ্যান, লিনাক্স ইউজার। সারা বিশ্বের ছাত্র এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামাররা দারুণভাবে গ্রহণ করল লিনাক্স কে। সেই সাথে বের হতে থাকে লিনাক্সের বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউশন - রেডহ্যাট, ক্যালডেরা, ডেবিয়ান ইত্যাদি। এর পর পরই ঘটে চমকপ্রদ কিছু ঘটনা। রেডহ্যাট সফটওয়্যারের লিনাক্স ১৯৯৬ সালে সেরা অপারেটিং সিস্টেমের পুরস্কার লাভ করে ইনফোওয়ার্ল্ড ট্রেড ম্যাগাজিনের কাছ থেকে। সে বছরের এপ্রিলেই রিসার্চাররা লস আলামাস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরীতে লিনাক্স ব্যবহার করে ৬৮টি পিসিতে সিঙ্গেল প্যারালাল প্রসেসিং ব্যবহার করে এটমিক শকওয়েভ সিমিউলেট করে। এই নিজেদের তৈরি সুপার কম্পিউটারের দাম হয় কমার্সিয়াল সুপার কম্পিউটারের তুলনায় মাত্র ১০ ভাগের ১ ভাগ। এটি প্রতি সেকেন্ডে ১৯ বিলিয়ন ক্যালকুলেশন পর্যন্ত গতি লাভ করে। তিন মাস পরেও এটিকে কখনো রিবুট করতে হয়নি, যা উইন্ডোজের ক্ষেত্রে ভাবাটা চরম নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই না!! 





টাক্স - লিনাক্সের লোগোঃ

লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের লোগোটি হচ্ছে একটি পেঙ্গুইন যার নাম দেয়া হয়েছে টাক্স। একেঁছিলেন ল্যারি উইং। লিনাক্সের অফিসিয়াল মাসকট হিসেবে এটি পরিচিত। লোগোটা নির্বাচনে আছেএক মজার ইতিহাস । লিনাক্সের জনক লিনাস টোরভাল্ডস অবকাশ যাপনের জন্য southern hemisphere বেড়াতে যায়। তো সেখানে একটা পেঙ্গুইন দেখে আদর করতে গেলেই পেঙ্গুইনটি দেয় কামড় টোরভাল্ডস এর হাতে। সেই স্মৃতির জের ধরেই লোগো হিসেবে পেঙ্গুইনের আবির্ভাব। লিনাক্সের এই লোগো সম্পর্কে এর স্রষ্টা লিনাস টোরভাল্ডস এর বক্তব্য অনেকটা এরকম -“অন্যান্য লোগোগুলো ছিল খুবই বোরিং এবং আমার মনের মতো ছিল না মোটেও। লিনাক্স করপোরেট লোগোর জন্য আমি খুঁজছিলাম এমন কিছু যা হবে মজার এবং লিনাক্সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একটা মোটাসোটা পেঙ্গুইন খাওয়াদাওয়া শেষ করে বসে আছে এমন একটা ছবি। অনেকেই আমাকে বলে লিনাক্সের যে আভিজাত্য তার সাথে এটা ঠিক খাপ খায় না। তাদের জন্য বলছি, তারা সম্ভবত চুপচাপ পেঙ্গুইনই দেখেছে, কিন্তু দেখেনি রাগী পেঙ্গুইনের ঘন্টায় ১০০ মাইল বেগে দৌড়ে আসা আক্রমণ। দেখলে তারা এধরণের মন্তব্য করার সাহস পেত না।“



 



 লিনাক্স ব্যবহারের কারণসমূহঃ

সারা বিশ্বে লিনাক্স এখন দারুণভাবে ব্যবহার হচ্ছে। অন্যতম কারণ হচ্ছে এর সিকিউরিটি। লিনাক্স প্রচন্ড রকমের সিকিউরড। ভাইরাস আক্রমণ, হ্যাক হয়ে যাওয়া এ কথাগুলো বোধহয় লিনাক্স ইউজাররা জীবনেও শুনে নি। আরও আছে, দীর্ঘদিনের ব্যবহারের ফলে উইন্ডোজ স্লো হয়ে যায় অথচ এক ইন্সটল দিয়েই আপনি লিনাক্স চালাতে পারবেন বছরের পর বছর। আর তাছাড়াও বাইরের দেশে যেখানে হাজার হাজার টাকা দিয়ে একটি অপারেটিং সিস্টেম কিনতে হয়, তার উপর রয়েছে অন্যান্য এপ্লিকেশন কেনার খরচ, সেখানে লিনাক্সে পুরো অপারেটিং সিস্টেমের সাথে হাজারখানেক এপ্লিকেশন পাবেন ফ্রীতে। এতো খরচের হাত থেকে বাঁচতে লিনাক্স কে তখন আপনার আশীর্বাদই মনে হবে। এছাড়াও হোম ইউজার থেকে শুরু করে নেটওয়ার্ক এনভায়রনমেন্টে লিনাক্স অপরিহার্য। লিনাক্সের কয়েকটি ব্যবহারের ভেতরে রয়েছে -
এপ্লিকেশন সার্ভার, ডেটাবেজ সার্ভার, ওয়ার্কস্টেশন, এক্স টার্মিনাল ক্লায়েন্ট, নেটওয়ার্ক সার্ভার, ইন্টারনেট সার্ভার, ক্লাস্টার কম্পিউটিং, এনবেডেড সিস্টেমস, ইউনিভার্সিটি সিস্টেম, বিভিন্ন কাস্টোমাইজেবল সলিউশন যেমনঃ হোটেল, মেডিক্যাল অফিস, রিজার্ভেসন সিস্টেম, লিগ্যাল অফিস, গর্ভমেন্ট, মিডিয়া টেলিকমিউনিকেশন, আইএসপি, রিসেলার, ফাইন্যান্সিয়াল ট্রেডার ওয়ার্কস্টেশন ইত্যাদি শত শত ক্ষেত্রেই লিনাক্সের প্রয়োগ হচ্ছে সফলতার সাথে।




লিনাক্সের বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউশনঃ

কোরেল লিনাক্স, আর্মড লিনাক্সওয়ার্ক্স, ক্যালডেরা লিনাক্স, ডেবিয়ান, ডিএলএক্স, লিনাক্স ম্যানড্রেক, লিনাক্স পিপিসি ২০০০, লিনাক্সওয়্যার, প্লাগ এন্ড প্লে লিনাক্স, রেডহ্যাট লিনাক্স, স্ল্যাকওয়্যার, টার্বোলিনাক্স, স্টর্ম লিনাক্স, সুসে লিনাক্স, উবুন্টু লিনাক্স, ড্যাম স্মল লিনাক্স ইত্যাদি।এর মধ্যে থেকে সার্ভার তথা নেটওয়ার্কের জন্য রেডহ্যাট এবং ডেস্কটপ কম্পিউটিং এর জন্য উবুন্টু অসম্ভব জনপ্রিয়। ইতোমধ্যেই অনেক ব্লগার উবুন্টু সম্পর্কে পোস্ট দিয়েছেন, উবুন্টু সম্পর্কে হয়তো অনেক কিছুই জেনে থাকবেন। তাই আর বিস্তারিত লিখলাম না। আরড্যাম স্মল লিনাক্সের ব্যপারে বলবো, এটা এতোটাই ছোট একটা অপারেটিং সিস্টেম (৫০-৬০ মেগাবাইট) যে আপনি সহজেই পেন ড্রাইভে নিয়ে ঘুরতে পারবেন। যখন অপারেটিং সিস্টেম কোন কারণে নষ্ট থাকবে অথচ আপনার জরুরী কাজ করা দরকার, সেই দরকারী মুহূর্তে আপনি পেনড্রাইভ থেকে লিনাক্সের মাধ্যমে বুট করে সকল কাজই করতে পারবেন।






যেখানে পাবেন লিনাক্সঃ

এইলিঙ্কে (উবুন্টু শিপমেন্ট) ক্লিক করে অর্ডার দিলে কয়েক হপ্তার মধ্যই আপানার বাসায় এসে পৌছে যাবে লিনাক্সের সিডি। এর জন্য কোন টাকা পয়সা দিতে হবে না। এছাড়াও আপনার যদি নেট স্পিড ভাল থাকে তাহলে নেট থেকে আইএসও ইমেজটা ডাউনলোড করে রাইট করে নিলেই হবে।



ইন্সটলেশনঃ

এ ব্যাপারটা নিয়ে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা থাকলেও লেখার আকৃতি বড় হয়ে যাওয়ার ভয়ে লিখছি না। তবে নিচে ব্লগার ভাইদের পোস্ট করা কিছু কিছু পোস্ট দিলাম। চিত্র সহ বর্ণনা করা আছে। কম্পিউটিং এর বেসিক ধারণা থাকলেই যে কেউ সহজে ইন্সটল করতে পারবেন লিনাক্স। এখানে উবুন্টুকে ডিফল্ট ধরে কাজ করা হয়েছে -
১. 
সহজ পার্টিশন
 
২. 
সহজ ইন্সটল
৩. 
লিনাক্সের উপর উইন্ডোজ ইনস্টল করার গ্রাব পুনরুদ্ধার [পোস্ট ইন্সটলেশন হেল্প]
৪. 
পিপিপিওই (PPPoE) ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ চালু
 
৫. 
উবুন্টুতে গ্রামীণফোন ইন্টারনেট সংযোগ (লেটেস্ট উবুন্টু Interpid Ibex এ গ্রামীনফোন, একটেল ও বাংলালিঙ্ক এর নেটওয়ার্ক সেটাপ করা যায় মাত্র কয়েক ক্লিকেই)
 
৬. 
উবুন্টুতে ডায়াল-আপ ইন্টার্নেট সংযোগ স্থাপন
 
৭. 
উবুন্টুতে বাংলা ভাষা সমর্থন এবং বাংলা কী-বোর্ড সেট-আপ
 





ব্যবহারঃ

লিনাক্সের চোখ ধাঁধানো গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস দেখলে যে কেউ মুগ্ধ হবে। কিছু কিছু জিনিষ আছে যেগুলো লিখে প্রকাশ করা যায় না। নিজের চোখে দেখে বিশ্বাস করতে হয়। লিনাক্সের ডেক্সটপ কেমন তা দেখতে চাইলে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন (সৌজন্যঃ ব্লগার টেকনো)। আশা করি, এরপর আপনার উইন্ডোজ কে রঙবিহীন একটা খেলনা ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না। এটা দেখুন -YouTube - Compiz Fusion Development 
এছাড়াও যারা স্ক্রিনশট দেখতে চান নিচের লিঙ্কটা পরখ করে দেখতে পারেন -
এখানে ক্লিক করুন
 


শেষের কথাঃ

সারা বিশ্বে লিনাক্সের ব্যবহার দ্রুত বেড়ে চললেও বাংলাদেশে এই গতি খুবই মন্থর। লিনাক্সের শক্তিশালী ক্ষমতার কারণে বাইরে ছাত্র, শিক্ষক, পেশাজীবি সকলেই লিনাক্স কে আপন করে নিচ্ছে। ভবিষ্যতের এই অপারেটিং সিস্টেমটিকে যদি এখনই শিখে নিতে পারেন তাহলে আগামী দিনের জন্য প্রস্তুত থাকবেন। এছাড়াও ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে লিনাক্স শিক্ষাটা আপনার জন্য প্লাস পয়েন্ট হতে পারে।
লিনাক্সের আগমন আমাদেরকে দিয়েছে ডিজিটাল মুক্তি। আমরা এখন কোন গোষ্ঠির (Microsoft) কাছে জিম্মি নই। যে কেউ চাইলে লিনাক্স কে নিজের মতো করে তৈরী করে নিতে পারে। পরিবর্তন, পরিবর্ধনে বাঁধা নেই। তাই লিনাক্স আজ আমাদের সকলের স্বপ্নের অপারেটিং সিস্টেম, যারা চাই প্রযুক্তি ও মেধাকে বিকশিত করতে, চাই সবার সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে।







[সূত্রঃ উইকি, বিভিন্ন ওয়েবসাইট, নিউজপেপার, ম্যাগাজিন, ব্লগ] 

No comments:

Post a Comment

Page Navigation

like

এই ব্লগটিতে সন্ধান করুন

Followers